ব্যবসায় উদ্যোক্তার ধারণা

ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র - ব্যবসায় উদ্যোক্তার ধারণা

কৃষক পরিবারের সন্তান শহীদুল। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছে পরিবারের অভাব-অনটন। জমি যা আছে বংশ তাতে ফসল হলে কষ্ট হওয়ার কথা নয় কিন্তু বন্যা, খরা, ফসলের দাম নেই নানান সমস্যা লেগেই থাকে। তার জ ক্লাসমেটের বাবাকে সে ছয় বছর আগে থেকেই দেখছে। জমি-জায়গা তেমন নেই। গ্রামের বাজারে ছোট দোকান। দিব্যি সংসার চলছে। এসএসসি পাস করে সে ব্যবসায় করবে ভাবলো। সবাই দোকানদারি করে। তার ভিন্ন কিছু করার চিন্তা। এলাকায় বিদ্যুৎ এসেছে। কাঠ বাদ দিয়ে মানুষ স্টীলের দরজা-জানালা, আলমারি ইত্যাদির দিকে ঝুঁকছে। সে শহরে যেয়ে ছয় মাস ওয়েল্ডিং এর কাজ শিখলো । কিছু টাকা জোগাড় করে গ্রামের বাজারে ছোট্ট একটা ঘর নিয়ে 'শহিদুল ওয়েল্ডিং' নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললো । পরিশ্রম আর ঐকান্তিকতায় সে এখন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত । শহরে একটা কারখানা করার কথা ভাবছে সে ।

যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ ব্যবসায় বিষয়ে নতুন চিন্তা মাথায় নিয়ে তা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হন তাকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলে। ব্যবসায় উদ্যোক্তা বা শিল্পোদ্যোক্তার ধারণা অনেকটা ব্যাপক। সুরুজ মিয়া বাজারে চালের দোকান দিয়েছে । সে উদ্যোক্তা কি না এটা চিন্তার বিষয় । কারণ বাজারে অনেকেই চলে বিক্রয় করছে। সেও চালের দোকান দিল, এতে নতুনত্ব নেই । এখন যদি এমন হয়, সে নওগাঁর চালের মোকাম থেকে ট্রাকে চাল এনে বাজারের দোকানদারদের কাছে বিক্রয় শুরু করলো; যা এর আগে ঐ বাজারে কেউ করেনি । তাহলে এখানে সৃজনশীল চিন্তা, অধিক ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা ইত্যাদি কাজ করেছে। এখন তাকে ব্যবসায় উদ্যোক্তা বলতে সমস্যা নেই । মিলন শেখের বাজারে চাল ও আটার মিল রয়েছে। সে ভাবলো যদি চিড়া তৈরির কল বসানো যায় তবে তা ভালো চলতে পারে। এই নতুন পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া যুক্ত করায় সেও উদ্যোক্তা। মিতু প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকায় এমব্রয়ডারি কারখানা গড়ে তুললো, হাফিজ মৌ-চাষ করে মধু সংগ্রহ ও তার ব্যবসায় শুরু করলো এক্ষেত্রে মিতু ও হাফিজ ব্যবসায় উদ্যোক্তার উদাহরণ। মপিটার উদ্যোক্তা সাধারণ ব্যবসায়ী নন, পেশাদার ব্যবস্থাপকও নন বরং তার চেয়ে বেশি কিছু। তাঁরা সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করে ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যেতে আনন্দবোধ করেন। অন্যের অধীনে চাকরি না করে অধিক মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারলেই খুশী হন। ছোট দিয়ে শুরু করেন বটে কিন্তু তার চিন্তা ছোট পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং তিনি নতুন নতুন ব্যবসায় বা শিল্প গড়ে তুলতে পারলেই তৃপ্ত হন। তাঁর চিন্তায় মননে, স্বপ্ন ও শয়নে সাফল্য অর্জনের চিন্তা তাড়া করে ফেরে। এমন উদ্যোক্তা শ্রেণি যে কোনো দেশের জন্যই নিঃসন্দেহে বড় সম্পদ । 

ভারতের টাটা কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা জামশেদ টাটা, KFC এর প্রতিষ্ঠাতা Harland Sanders, Walmart এর প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়াল্টন বিশ্বসেরা উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশে জহুরুল ইসলাম, আকিজ মিয়া, স্যামসন এইচ চৌধুরীর মতো উদ্যোক্তাগণ আমাদের গর্বের ধন। তাঁদের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে তারাও একদিন ছোট উদ্যোক্তা হিসেবেই ব্যবসায় শুরু করেছিলেন ।

Content added By
Promotion